নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল, অনন্য ও অসীম সাহসের প্রতীক। আমার দৃষ্টিতে তিনি শুধু একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী নন—তিনি এক আদর্শ নেতা, অসীম দেশপ্রেমের প্রতিমূর্তি এবং আত্মত্যাগের এক জীবন্ত উদাহরণ। তাই আজকের পোস্টে দিলাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা যা আপনি যেকোনো পরীক্ষায় বেবহার করতে পারবেন।

একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা
ভূমিকা:
বিবেকানন্দের জীবনী ও বাণীর দ্বারা উদ্বৃদ্ধ, যিনি ছিলেন যথার্থ অর্থেই ‘মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত, যাঁর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’র সব্যসাচীর বাস্তব রূপ, পরাধীন ভারতের গ্লানি দূর করার জন্য যে বীর দেশপ্রেমিক আক্ষরিক অর্থেই আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তাঁর নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ও পরিচয়:
ওড়িশার তৎকালীন রাজধানী কটক শহরে 1887 খ্রিস্টাব্দের 20 জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম হয়। তাঁর পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন কটক শহরের প্রসিদ্ধ আইনজীবী। মাতা ছিলেন প্রভাবতী দেবী। জানকীনাথের পৈত্রিক আদি নিবাস ছিল দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা :
মেধাবী সুভাষচন্দ্রের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কটকের একটি মিশনারি স্কুলে। এখানে তিনি কিছুদিন পর কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভরতি হন এবং এই স্কুল থেকে 1913 খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।
এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। এখানে শিক্ষাকালে তাঁর মধ্যে দেশাত্মবোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই কলেজের এক ইংরেজ শিক্ষক ওটেন সাহেব একদিন ভারতীয়দের প্রতি কটূক্তি করলে তিনি প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন সংগঠিত করেন। ফলস্বরূপ তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন।
পরে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের চেষ্টায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভরতি হন এবং এই কলেজ থেকে 1919 খ্রিস্টাব্দে দর্শন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণির অনার্স সহ বি.এ. পাশ করেন। এরপর আই.সি.এস পরীক্ষা দেবার জন্য বিলাতে যান এবং 1920 খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ স্থান অধিকার করে আই.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়াও তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মুক্তি আন্দোলনে যোগদান:
এরপর তিনি শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে দেশে ফিরে এসে কোনো সরকারি উচ্চ পদের চাকুরি গ্রহণ না করে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে দেশে রাজনৈতিক মুক্তি আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় তিনি একে একে জাতীয় শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষপদ, কলকাতার মেয়রের পদ অলঙ্কৃত করেন। এই সময় তাকে একাধিক বার কারারুদ্ধ করা হয়।
পূর্ণ স্বাধীনতা সমর্থক সুভাষচন্দ্র 1938 ও 1939 খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা ও ত্রিপুরীতে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন। এখানে তাঁর চরমপন্থী চিন্তাধারার সঙ্গে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের তীব্র মতপার্থক্য হলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরোয়ার্ড ব্লক’ গঠন করেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন পথের সন্ধান করতে থাকেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান:
ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এই সময় তিনি 1941 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ শাসকদের চোখে ধুলো দিয়ে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত পেরিয়ে বার্লিনে উপস্থিত হন। এখান থেকে কিছুদিন পরে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি ভারতমুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হলেন। এই বাহিনীর নতুন নাম হল আজাদ হিন্দ ফৌজ। তাঁর নেতৃত্বে 1945 সালের 18 মার্চ ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের একটি অংশ মুক্ত হয় এবং সেখানে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।
এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপান ইংরেজ বাহিনীর হাতে পরাজিত হয়। ফলে আজাদ হিন্দ বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় সুভাষচন্দ্র নতুন সাহায্যের আশায় জাপানের তাইহোকু বিমান বন্দর থেকে বিমানে মাঙ্গুরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তারপর থেকে তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অনেকে মনে করে তিনি ওই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তাঁর এই মৃত্যু-তত্ত্বে কেউ বিশ্বাস করে না।
উপসংহার:
বর্তমানে স্বাধীন ভারতে যখন দেশ নেতারা পারস্পরিক স্বার্থের হানাহানিতে মত্ত, তাদের আদর্শহীনতা দেশকে যখন বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখন এই নিখাদ দেশপ্রেমিকের ত্যাগী জীবন, আদর্শ ও মহত্ত্ব আমাদের জাতীয় জীবনে দিশারি হোক এই আমাদের কামনা।
আরও পড়ুন
- বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
- নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
- রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
- ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
- করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
- YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
- ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
- মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
- করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
- সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →

HelpNbuExam বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ভুল এবং কোয়ালিটি স্টাডি মেটিরিয়াল প্রদান করে আসছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সহজ বাংলা ভাষায় জটিল বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেওয়া, যাতে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী তাদের সরকারি চাকরির স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। WBCS, SSC, এবং রেলওয়ে পরীক্ষার লেটেস্ট আপডেট এবং স্ট্র্যাটেজির জন্য আমাদের সাথে থাকুন।
