মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা একটি দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার এবং সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবোধ গঠনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। যে ভাষায় আমরা চিন্তা করি, অনুভব করি এবং স্বাভাবিকভাবে নিজেদের প্রকাশ করি, সেই ভাষায় বিজ্ঞান শেখা ও বোঝা তুলনামূলকভাবে সহজ, কার্যকর এবং ফলপ্রসূ। শেয়ার করলাম মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা যা ঘুরে ফিরেও এসে থাকে যেমন, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা; বিজ্ঞান লিখতে হলে কী কী ভাষা শিখতে হবে।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা | বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চা রচনা
ভূমিকা :
“মাতৃভাষায় বিজ্ঞান দূর করে অজ্ঞান,
শিক্ষা পূর্ণ করি ভরে তোলে মনপ্রাণ।”
শিক্ষার সঙ্গে মাতৃভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সব শিক্ষাবিদই মনে করেন, মাতৃভাষা শিক্ষার অন্যতম বাহন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। J.R.Firth মন্তব্য করেছেন, ‘As a first principle, fix your faith to the mother tongue‘। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বকীয় ভঙ্গিতে বলে গেছেন, “শিক্ষায় মাতৃভাষাই মাতৃদুগ্ধ’। UNESCO সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছে, “The best medium for teaching is the mother tongue of the pupil‘.
বিজ্ঞানচর্চার ক্রামান্নতি এবং মাতৃভাষার গুরুত্ব :
প্রথাগতভাবে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত ইংরেজদের হাত ধরে। স্বভাবতই ইংরেজি ভাষাতেই আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত। কিন্তু পরবর্তীকালে বাংলার রেনেসাঁস যুগের মনীষী এবং বিজ্ঞানীরা জাতীয়তাবোধ উন্মেষের মুহূর্তে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এ ব্যাপারে পথিকৃৎ ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং অক্ষয়কুমার দত্ত। বিজ্ঞানের নানা বিষয় যথা, রসায়ন, শারীরতত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা সম্পর্কিত সন্দর্ভ প্রথম প্রকাশ পায় অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘বিদ্যাদর্শন’ পত্রিকাতে। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বাংলায় বিজ্ঞানধর্মী রচনা প্রকাশ করেন। তাঁ
রচিত ‘অব্যক্ত‘ বিজ্ঞান রচনা এবং সাহিত্যচেতনার যুগলবন্দি। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে শান্তিনিকেতন থেকে বিজ্ঞান পুস্তিকা প্রকাশ করতে থাকেন চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য, জগদানন্দ রায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রমুখরা। পরের যুগে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ দিকপাল বিজ্ঞানীরা এই কাজে ব্রতী হন।
পদার্থবিদ সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছিলেন, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব নয়, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান জানেন না।” স্বাধীনোত্তরকালে শ্রদ্ধেয় রাজশেখর বসু বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার উপযোগী পরিভাষা গঠনে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার যৌন্ত্রিকতা :
বিশেষ কোনো ভাষা বিজ্ঞানচর্চার শর্ত নয়। আর্কিমিডিস, নাগার্জুন, মাদাম কুরি, নিলস বোর যথাক্রমে জাতিতে গ্রিক, সংস্কৃত, ফরাসি এবং জার্মান। তাঁরা নিজেদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করেছেন।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সীমাবদ্ধতা :
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার কিছু আপাত সীমাবদ্ধতা আছে। প্রথম অসুবিধা হল উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের অভাব এবং পরিভাষার জটিলতা। তাই বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ভাণ্ডারটিকে সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন।
বর্তমান বিশ্বায়ন এবং বিজ্ঞানচর্চা :
বর্তমান পৃথিবীর বিজ্ঞানচর্চা হয়ে উঠেছে যন্ত্রনির্ভর। কম্পিউটার এবং ইনটারনেট আজকের উন্নত বিজ্ঞানচর্চার অপরিহার্য শর্ত। কম্পিউটারের ভাষা মূলত ইংরেজিকেন্দ্রিক। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করলে ইংরেজি ভাষাকে আমরা বিজ্ঞানচর্চার ভাষা হিসেবে সম্পূর্ণ বর্জন করতে পারি না।
অতীতে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার সুযোগের অভাব:
দুর্ভাগ্যের বিষয় অতীতে উচ্চশিক্ষার বাহন হিসেবে আমাদের মেনে নিতে হয়েছিল ইংরেজিকে। আমাদের বিজ্ঞানচর্চারও মাধ্যম ছিল তাই ইংরেজি। নিজের ভাবনা নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার মধ্যে যে স্বাচ্ছন্দ্য থাকে একটি বিজাতীয় ভাষায় তা সম্ভব নয়। ভাষা-শিক্ষার সংকটে পড়ে অনেক মেধাবী বাঙালি শিক্ষার্থীর প্রতিভার আশানুরূপ বিকাশ ঘটত না।
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা এখনও উপেক্ষিত:
স্বাধীনতার পরে শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষার মর্যাদা অনেক বেড়েছে। কাগজে কলমে মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষাদানের ব্যাপারটিও অনেক ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে। তবু কার্যক্ষেত্রে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান-অনুশীলনের প্রসঙ্গটি এখনও উপেক্ষিত রয়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলি চর্চা করার মতো বই এবং পরিভাষা বাংলায় নেই।
সেইসঙ্গে এও বলা হয়ে থাকে যে, বিজ্ঞানের মতো একটি আন্তর্জাতিক বিষয়ের চর্চা বাংলাতে হলে তা জগৎবাসীর কাছ থেকে দূরেই যাবে। যুক্তি হিসেবে এগুলি অসার। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ অনেক কিছুই তৈরি করে নেয়। বই এবং পরিভাষার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা যেতে পারে। আর গবেষণা যে ভাষাতেই হোক না কেন ভাবান্তরের মাধ্যমে খুব সহজেই তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার নিদর্শন সত্ত্বেও অনীহার অবসান হয়নি:
ফরাসি, জার্মান, জাপানি, রুশ প্রভৃতি ভাষায় বিজ্ঞানের চর্চা সম্ভব হয়েছে। বাংলা দেশে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদানন্দ রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখের কিছু কিছু রচনায় বৈজ্ঞানিক ভাবনা যেভাবে লিপিবন্ধ হয়েছে, তাতে বুঝতে পারি বাংলা ভাষাও বিজ্ঞানের ভাবনা ও সূত্র প্রকাশ করতে সক্ষম। সেই সঙ্গেই এটাও স্বীকার্য যে, বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবান পূর্বসুরিদের। প্রয়াস সত্ত্বেও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
উপসংহার :
বিজ্ঞানচর্চার ভাষা-বিচারে আমাদের গোঁড়া হলে চলবে না। প্রাথমিক শিক্ষা এবং গণ-বিজ্ঞানচেতনা প্রসারে মাতৃভাষা বাংলা যেমন অপরিহার্য, তেমনি উচ্চশিক্ষায়, প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিজ্ঞানচর্চায় অপরিহার্য হল ইংরেজি ভাষা। আমাদের দুটি ভাষাকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন
- বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
- নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
- রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
- ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
- করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
- YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
- ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
- মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
- করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
- সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →

HelpNbuExam বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ভুল এবং কোয়ালিটি স্টাডি মেটিরিয়াল প্রদান করে আসছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সহজ বাংলা ভাষায় জটিল বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেওয়া, যাতে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী তাদের সরকারি চাকরির স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। WBCS, SSC, এবং রেলওয়ে পরীক্ষার লেটেস্ট আপডেট এবং স্ট্র্যাটেজির জন্য আমাদের সাথে থাকুন।