জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা রচনা (800 Words)

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য; প্রযুক্তি ভাগাভাগি, ন্যায়সঙ্গত নীতি ও অর্থায়ন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে যৌথ উদ্যোগকে আরও কার্যকর করে তোলে। তাই আজকের পোস্টে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা রচনা শেয়ার করলাম যা আপনি যেকোনো পরীক্ষায় বেবহার করতে পারেন।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা রচনা

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে মানবসভ্যতার সামনে সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ যে সংকটটি উপস্থিত হয়েছে, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন বা ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ‘ (Climate Change)। এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর এক প্রান্তে কার্বন নিঃসরণ হলে তার প্রভাব অন্য প্রান্তের আবহাওয়াতেও পড়ে। এই কারণে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিধ্বংসী প্রভাব মোকাবিলা করা কোনো একক রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সুদৃঢ় এবং দীর্ঘমেয়াদী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব কেন এই সহযোগিতা প্রয়োজন এবং বিশ্বনেতারা পৃথিবীকে বাঁচাতে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাসের অত্যধিক নিঃসরণ, যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং‘ (Global Warming) ঘটছে। বায়ুমণ্ডলের কোনো সীমানা নেই। আমেরিকা বা চীন যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছাড়ছে, তার প্রভাবে ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলেও ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস দেখা দিচ্ছে।

তাছাড়া, উন্নত দেশগুলোর কাছে যে প্রযুক্তি এবং আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তা উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলোর কাছে নেই। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই দরিদ্র দেশগুলোই। তাই প্রযুক্তি হস্তান্তর, আর্থিক সহায়তা এবং নীতিমালার সমন্বয়ের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।

Also check- সাইবার ক্রাইম প্রবন্ধ রচনা

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক চুক্তি

বিশ্বনেতারা গত কয়েক দশক ধরেই এই সমস্যা সমাধানে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. আর্থ সামিট (১৯৯২): ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনকে একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং ‘UNFCCC’ গঠিত হয়।

২. কিয়োটো প্রোটোকল (১৯৯৭): এটি ছিল প্রথম বড় ধরনের চুক্তি যেখানে উন্নত দেশগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল।

৩. প্যারিস জলবায়ু চুক্তি (২০১৫): এটি ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই চুক্তিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশ একমত হয় যে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনেক নিচে, সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

উন্নত বনাম উন্নয়নশীল দেশ: দায়িত্বের সমবণ্টন

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি বড় বিতর্কের বিষয় হলো ‘দায়িত্ব কার কতটুকু?’। ঐতিহাসিকভাবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে উন্নত দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে। তাই তাদের দায়িত্বও বেশি। এই নীতিকে বলা হয় “Common But Differentiated Responsibilities” (CBDR)।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর (যেমন ভারত, ব্রাজিল) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখনও শক্তির প্রয়োজন। তাই আন্তর্জাতিক আলোচনার মাধ্যমে স্থির হয়েছে যে, উন্নত বিশ্ব বা ‘গ্লোবাল নর্থ‘ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বা ‘গ্লোবাল সাউথ‘-কে আর্থিক অনুদান এবং সবুজ প্রযুক্তি (Green Technology) দিয়ে সাহায্য করবে, যাতে তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়েও উন্নয়ন বজায় রাখতে পারে।

Also check- প্লাস্টিক দূষণ ও তার প্রতিকার প্রবন্ধ রচনা

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভারতের ভূমিকা

ভারত একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এবং বিশাল জনসংখ্যার দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভারতের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই অংশটি জানা বিশেষ জরুরি:

  • পঞ্চামৃত (Panchamrit): গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত COP26 সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতকে ‘নেট জিরো‘ (Net Zero) বা কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
  • নবায়নযোগ্য শক্তি: ভারত সৌরশক্তি এবং বায়ুশক্তিতে বিশাল বিনিয়োগ করছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোট (International Solar Alliance – ISA) গঠনে ভারত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছে।
  • জীবনশৈলী পরিবর্তন: ভারত বিশ্বমঞ্চে ‘Mission LiFE‘ (Lifestyle for Environment) স্লোগান তুলে ধরেছে, যার মূল কথা হলো পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন।

বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ

এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে:

  • ক্লাইমেট ফাইন্যান্স বা অর্থায়ন: উন্নত দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
  • প্রযুক্তি হস্তান্তর: অনেক সময় মেধাস্বত্ব আইনের কারণে আধুনিক সবুজ প্রযুক্তি গরিব দেশগুলোর হাতে পৌঁছাতে দেরি হয়।
  • ভূ-রাজনীতি: অনেক সময় দেশগুলোর পারস্পরিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব জলবায়ু আলোচনাকে ব্যাহত করে।

Also check- জল সংকট ও জল সংরক্ষণ প্রবন্ধ রচনা

উপসংহার

জলবায়ু পরিবর্তন কোনো ভবিষ্যতের জল্পনা নয়, এটি বর্তমানের এক রূঢ় বাস্তবতা। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া থেকে শুরু করে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত—সবই এর প্রমাণ। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে “বসুধৈব কুটুম্বকম” (পুরো পৃথিবী এক পরিবার) নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। সীমান্ত ভুলে গিয়ে প্রযুক্তি, অর্থ এবং সদিচ্ছার আদান-প্রদান করতে হবে। ছাত্রসমাজ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তোলা। কারণ, আমাদের হাতে পৃথিবী একটাই, এবং একে বাঁচানোর দায়িত্বও আমাদের সবার।

আরও পড়ুন

  • বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
  • নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
  • রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
  • ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
  • করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
  • YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
  • ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
  • বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
  • বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
  • মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
  • করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
  • সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →

Leave a Comment

error: Content is protected !!