করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা | Covid-19 Essay in Bengali

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ হলো এক ধরনের সংক্রামক ভাইরাস, যা প্রথম ২০১৯ সালে চীনের উহানে শনাক্ত হয়। খুব দ্রুত এই ভাইরাস মানুষের শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে এবং এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আজকের আই পোস্টের মাধ্যমে আমি শেয়ার করেতে চলেছি করোনা ভাইরাস বাংলা প্রবন্ধ রচনাটি

আতঙ্কের নাম : করোনা ভাইরাস বাংলা প্রবন্ধ রচনা (Coronavirus Bangla Rachana)

ভূমিকা: 

“পৃথিবীর গভীর গভীরতম অসুখ এখন”

জীবনানন্দ দাশ 

আদিম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ পৃথিবীতে লড়াই করে বেঁচে আছে। আগামী দিনেও লড়াই করে বেঁচে থাকতে হবে। এখন লড়াই রোগ জীবাণুর সঙ্গে। হার ও জিতের মধ্য দিয়েই তারা টিকে আছে আজও পৃথিবীর বুকে। সম্প্রতি করোনা নামক এক ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। এই মারণ ভাইরাসের নাম কোভিড-19। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এখন বিশ্বের ত্রাস। COVID-19 কথাটির Corona Virus Disease-2019 হল এর সম্পূর্ণ নাম।

নামকরণ ও ইতিহাস:

করোনা ভাইরাস‘ নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ ‘করোনা‘ থেকে, যার অর্থ ‘মুকুট’ বা ‘হার’। ‘করোনা’ শব্দটি নিজে গ্রিক Kopwvn Korone থেকে এসেছে যার অর্থ ‘মালা’ বা ‘হার’ নামটি ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ভিরিয়নের বৈশিষ্ট্যমূলক উপস্থিতিকে নির্দেশ করে।

করোনা ভাইরাস 1930 এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এরপর 2003, 04, 05, 12 এবং 2019 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে চিনের উহান নগরীর হুয়ানান সামুদ্রিক খাদ্যের পাইকারি বাজারের দোকানদারদের মধ্যে প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। বাজারটিতে সামুদ্রিক খাদ্য দ্রব্যের পাশাপাশি জীবন্ত বাদুড়, সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের মাংস বিক্রি হত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করোনা ভাইরাসটি বিবর্তিত হয়ে আরেকটি মধ্যবর্তী পোষক প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে। এই ভাইরাসটি বিভিন্ন রূপ বদলিয়ে দেশের পর দেশকে মহামারীর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সারা পৃথিবী আক্রান্ত এই মারণ ভাইরাসের দ্বারা, গোটা বিশ্বে থরথরিকম্প রব।

রোগের লক্ষণ:

বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের রূপ বদল নিয়ে চিন্তিত, তাঁরা এর নতুন নামকরণ করেছেন নোভেল করোনা’; 

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল—

  1. জ্বর
  2. অবসাদ
  3. শুষ্ক কাশি
  4. বমি হওয়া, ও শ্বাসকষ্ট
  5. গলা ব্যথা
  6. ছে মাথা ব্যথা
  7. পেটের সমস্যা বা নাকে গন্ধ না পাওয়া
  8. শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, মুখে স্বাদ না থাকা ইত্যাদি। 

এই ভাইরাস সবচেয়ে ক্রিয়াশীল ফুসফুসের উপর। কিডনি, হার্টকেও অকেজো করে। এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বিশ্ববাসী ত্রস্ত।

করোনা ভাইরাসের প্রভাব:

এই ভাইরাসটি মানবদেহের ফুসফুস, কিডনি, হার্ট প্রভৃতি প্রধান অঙ্গগুলির ক্ষতি সাধন করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের। ক্ষেত্রে এর প্রভাব মারাত্মক হয়। বর্তমান অবস্থায় শিশুদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে।

করোনা ভাইরাসের সতর্কতা:

করোনা আক্রান্ত রোগীকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখতে হবে। মাস্ক পরতে হবে আক্রান্ত ও আক্রান্তের ঘরে যাওয়া ব্যক্তিকে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। প্রথমে তিনফুট ও পরে ছয়ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বারবার হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। রোগীর হাঁচি কাশির সময় মুখে রুমাল ও টিসু পেপার ব্যবহার করতে হবে। যত্রতত্র থুতু, কফ ইত্যাদি ফেলা চলবে না। 14 দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। 

রোগের প্রকোপ অনুযায়ী ডাক্তারি পরামর্শ ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভরতি করতে হবে। করোনা রোগীকে মানসিক ঘৃণা করলেও রোগীকে নয়। এ ব্যাপারে বহু মানুষ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন ক্লাব সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন– সরকারি সহযোগিতা তো রয়েছেই। আশার খবর এই যে প্রতিষেধক হিসেবে কোভিশীল্ড, কো-ভ্যাকসিন। ইত্যাদি টিকা ভারতে সরকার বিনামূল্যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে সরবরাহ করছে।

প্রানহানি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়:

চিনের উহান প্রদেশের পর এই করোনা ভাইরাস বিশ্বের প্রায় 200-টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সমগ্র বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে। ভারতের দিল্লি, কেরালা, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে এই মারণ ভাইরাস ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে আমেরিকায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত ব্যাপক প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বে দেখা যায়নি। চারদিকে এক আতঙ্কময় পরিবেশ। লক্ষ লক্ষ মানুষ লকডাউনে কাজ হারিয়ে বেকার অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। চারিদিকে হাহাকার রব। বিশেষ করে দিনমজুর ও যারা ছোটো ছোটো কাজে অন্যের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের সংসারের অচল অবস্থা। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে।

উপসংহার:

প্রতিষেধক ছাড়া করোনার হাত থেকে রক্ষা পাবার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা সফলও হয়েছেন। ভারতবর্ষের গবেষক ও বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় আবিষ্কৃত হয়েছে প্রতিষেধক। ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশও এই প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে। ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় 100 কোটি লোকের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। শিশুদের প্রতিষেধক দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এই প্রতিষেধক নিলে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে তবে মৃত্যু ভয় একেবারে নেই বললেই চলে। তাই এ প্রতিষেধকই এখন আমাদের বাঁচার একমাত্র জিয়নকাঠি।

আরও পড়ুন

  • বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
  • নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
  • রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
  • ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
  • করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
  • YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
  • ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
  • বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
  • বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
  • মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
  • করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
  • সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →

Leave a Comment

error: Content is protected !!