মানবসভ্যতার অগ্রগতির মূল শক্তি হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান যুক্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রমাণকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। অন্যদিকে কুসংস্কার হলো অজ্ঞতা, ভয় ও অন্ধবিশ্বাসের ফল। এই দুটি বিষয় একে অপরের বিপরীত। এই প্রবন্ধ রচনাটির নাম “বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা” আর এখানে আমরা বিজ্ঞান ও কুসংস্কার রচনা 400 শব্দের বেশি Words নিয়ে হাজির।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা | অন্ধকুসংকার কাকে বলে
ভূমিকা:
বিজ্ঞানের কাজ যুক্তি দিয়ে, কুসংস্কারের অবস্থান তার বিপরীতে। বর্তমানে বিজ্ঞানের বলয়ে থাকলেও আমরা কুসংস্কারের প্রভাব এড়াতে পারিনা। কুসংস্কারের ভূত ঘাড়ে চেপে আছে। তাকে নামাবার সাহস ও শিক্ষা আজও আমাদের করায়ও হয়নি। আজও সে আমাদেরকে ভয় দেখায়। টিকটিকি ডাকলে অশুভ জ্ঞান করি, হাঁচি পরলে আমরা থেমে যাই,পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে কপালে দইয়ের ফোঁটা দিয়ে যাই। এসব থেকে মুক্তির উপায় কি?
কুসংস্কার কী?
কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি বিচার-হীন,অন্ধবিশ্বাস,ধারণা।ইংরেজীতে একে বলে ‘superstition’, যা বহুদিন ধরে চলে আসছে— এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারনে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ তন্ত্রমন্ত্র ঝাড়ফুক করে, ভূত প্রেত ডাইনি ইত্যাদির ভয়ে মরে।
সংঘাত:
বস্তুত, পৃথিবীর সহতা সত্যিগুলোকেও মানুষ যখন কুসংস্কারের অন্ধকারে ঢেকে ফেলে, নিজের চোষ বা কানের চেয়েও অনোর বলা কথাকে BBকের জোরে বেশি সত্যি বলে মানতে শুরু করে, তখনই তৈরি হয় মুক্তি আর সংস্কারের মধ্যে সংঘাত। আর অন্যান্য যাবতীয় প্রাণীদের চোখে মানুষ যেখানে তার বুদ্ধিবৃত্তি ও বিচারপতির জোরে, উৎকর্ষ লাভ করেছে সেখানেই বিজ্ঞানতার প্রথম সূত্রপাত — যার হাত ধরে লক্ষকোটি বর্ষব্যাপী বিবর্তনের ধারার মানুষ পৃথিবীতে হয়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ প্রাণী। অথচ বিজ্ঞানের এই প্রবলতেজা গতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার।
কুসংস্কারের কারণ:
আসলে সাতার আদিপর্বে মানুষ যখন বনবাসী, তখন প্রকৃতির কাছে সে ছিল নিতান্তই অসহায়। তার না জানা ছিল প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর শক্তি, না জানা ছিল সেই দুর্যোগের কারণ। সে শুধু অজানা ভয়ে শঙ্কিত হত, বাঁচার রাস্তা খুঁজত। বিশাল প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি তুচ্ছ মানুষের তখন স্বাভাবিকভাবেই ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রমবোধ জাগত। সেই সম্ভ্রমবোধ থেকে মানুষ সেই শক্তির কাছে নতজানু হওয়া শুরু করল। তার নিজস্ব বোধবুদ্ধির বাহিরে বেরিয়ে গিয়ে সেই কাল্পনিক অপদেবতাদের শান্ত করার জন্য কিছু কল্পিত আচার, ক্রিয়াকর্ম সে পালন করতে লাগল। এভাবেই পুরু হয় আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক শক্তির ওপর মানুষের আত্মবিশ্বাসমূলক নির্ভরতার মুখ।
কুসংস্কারের ধরন:
কিন্তু, আজও যখন বিজ্ঞানের রসের ঢাকা এগিয়ে গেছে বহুদূর, তবুও আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারের ধারা অব্যাহত। আজও হাঁচি, কাশি, টিকটিকি, জাহিলে, বর্ণভেদ, তাবিজ, করা, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, ডাইনি- সবমিলিয়ে সমাজ ক্ষয়িষ্কপ্রায়। সেজন্যেই হাউসে ক্লিকাত আঙুলে চকচক করে ওঠে হরেক আংটির ছটা। কার্যকারণ সূত্রের মধ্য দিয়ে সত্যে পৌঁছোনোর চেয়ে, জলদি সুখের জন্য হাপিত্যেশ করে ঘুরতে ঘুরতে মানুষ, আজ পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেই বেশি গুলি বোধ করেছে। ফলে ভণ্ডদের জুয়াচুরির হারও বেড়ে গেছে।
আধুনিকতা ও বিজ্ঞান চেতনা :
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষ প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার এবং অবাধ্য প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার ফলশ্রুতি বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান চেতনা। বিজ্ঞান দিয়ে আমরা বিশ্বের অব্যাখ্যত বিষয়গুলিকে বোঝার করছি। কিন্তু আজও মন থেকে কুসংস্কার সম্পূর্ণ দূর করতে সক্ষম হয়নি।অদৃষ্টবাদী, অলৌকিকে বিশ্বাসী মানুষের কাছে বিজ্ঞান চেতনা হার মেনেছে। তবে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন যুক্তিবাদী মানুষ এতটুকু বুঝতে শুরু করেছে যে, যক্তি-তর্কের বাইরে অন্ধবিশ্বাসের কোনো স্থান নেই।
অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি :
বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান প্রসার মানুষের অন্ধবিশ্বাস ও অসহায় ধর্ম- আনুগত্যর অচলায়তনে আঘাত হেনেছে। মধ্যযুগে ইউরোপে প্রথম মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করল ধর্মীয় ব্যাখ্যায়। গড়ে উঠল নতুন এক মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস। মানুষ বুঝল সব প্রাচীন তথ্য এবং মতবাদই চোখ বুঝেই গ্রহণ যোগ্য নয়, বিচার ও যুক্তিশীলতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে তবে গ্ৰহণীয় হবে সবকিছু। এই সন্দেহের মধ্যে দিয়ে মানুষের যথার্থ বিজ্ঞান – যুক্তির প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পেল।
| অন্ধকুসংকার কাকে বলে?একদিকে যখন চলছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, অন্যদিকে ইংল্যান্ডে এখনও ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে অসহায় নারীদের।ভারতে চলছে সতীদাহ সহমরণ, চলছে হাঁচি টিকটিকি, মাদুলি,তাবিজ, কবচ অতি সুসভ্য সমাজে আজও টিকে রয়েছে এমন ধরণের কত অন্ধবিশ্বাস। কালোবিড়াল সামনে দিয়ে গেলে ইউরোপের অনেক লোক আজও গাড়ি থামিয়ে বসে থাকেন। ভয় এবং আশার অবখ্যাত উৎস থেকেই অযৌক্তিক কুসংস্কারের সৃষ্টি। |
সামাজিক কুসংস্কার, যা এখনও প্রবল:
আধুনিক ভারত যদিও বৈজ্ঞানিক অগ্ৰগতির পথে এগিয়ে চলেছে তবুও আমাদের এই অলোকশিখাই হল বিজ্ঞান চেতনা যা মানুষ কে করেছে যুক্তিবাদী, জীবনকে করেছে বাস্তবমুখী।
জীবনে নানা ধরনের অসুখ – বিজ্ঞান চেতনার অভাব:
অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুসংস্কারের অন্ধত্ব আমাদের জীবনকে যে কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার উদাহরণ অনেক। কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া টাইফয়েড,কালাজ্বর ইত্যাদি অসুখে।গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। আমাদের অজ্ঞতা বিজ্ঞান চেতনার অভাবে আমরা কলেরার হাত থেকে বাঁচতে পূজা দিতাম ‘ওলাবিবির’।বসন্তের হাত থেকে রেহাই পেতে ‘মা শিতলার’ শপথ নিতাম। দুরারোগ্য অসুখ সারানোর জন্যে ব্যবহার করতাম তাবিজ, কবজ ফকিরের জলপড়া, পিরের শিরনি এবং মাকালীর কাছে মানত করতাম পাঁঠা বলিদানের। সাপের কামড় থেকে বাঁচতে মা মনসার কাছে ধরণা দিতাম। শনি ঠাকুরের আমরা শরণ নিতাম গ্রহ শান্তির জন্য। কিন্তু পরে যখন বিজ্ঞান ক্রমোন্নতিতে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হল, তখন দেখা গেল এইসব ভ্রান্ত ধারণা। রোগের প্রতিকার ওষুধে হয়, ওসবে নয়।
ভয় ও কুসংস্কার থেকে রেহাই পেতে হলে:
বিজ্ঞান চেতনা আমাদের কেবল শারীরিক অসুখ থেকে বাঁচায় না নানা রকম মানসিক রোগেরো নিরাময় ঘটিয়ে থাকে।আমাদের মনে জাকিয়ে আছে ভুত প্রেতের বিশ্বাস। মন্ত্রতন্ত্র, ঝাড়ফুকে আজও আনেকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন মারন উচাটন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায়। কালো বিড়াল, হাঁচি টিকটিকি, নবজাত শিশুকে পেঁচোয় পাওয়া ইত্যাদিকে আমরা আজও।অশুভ ব্যপার বলে মনে করে থাকি। বাঘের হাতে মৃত্যুকে এড়াবার জন্য সুন্দরবন অঞ্চলে এখনও বনবিবির পুজো দেওয়া হয়। এগুলি সবই কুসংস্কার। এইসব কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য চাই বিজ্ঞান চেতনা অর্থাৎ যুক্তিবাদী বিচার বোধ।
বিজ্ঞান চেতনা ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কার:
বিজ্ঞান চেতনা আমাদের শিক্ষাকে কতখানি পরিপূর্ণতা এনে দিতে পারে, তার প্রমান বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মহাকাশ গবেষনায়, শস্য উপাদানে, কৃষিপণ্য সংরক্ষনে, সমুদ্র গবেষণায়, নতুন যানবাহনের উৎপাদনে। চিকিৎসা এখন সর্বৈব বিজ্ঞান নির্ভর।
উপসংহার:
বিজ্ঞান চেতনা মানবসভ্যতার বিকাশের চাবিকাঠি কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ভয়, এবং নানা ধরনের অলৌকিক নির্ভরতা আমাদের নানা ভাবে ক্ষতি করে থাকে। বিজ্ঞান চেতনা থাকলে এইসব ব্যপার গুলি মূহুর্তে কেটে যায়। এই বিজ্ঞান চেতনা প্রতিমুহূর্তে অন্ধত্ত্ব ও অজ্ঞতার অবসান ঘটিয়ে আমাদের আলোর পথযাত্রি করে তুলেছে।
আরও পড়ুন
- বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
- নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
- রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
- ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
- করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
- YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
- ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
- বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
- বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
- মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
- বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
- করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
- সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →
- বইপড়া বাংলা রচনা Read →

HelpNbuExam বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ভুল এবং কোয়ালিটি স্টাডি মেটিরিয়াল প্রদান করে আসছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সহজ বাংলা ভাষায় জটিল বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেওয়া, যাতে প্রতিটি ছাত্রছাত্রী তাদের সরকারি চাকরির স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। WBCS, SSC, এবং রেলওয়ে পরীক্ষার লেটেস্ট আপডেট এবং স্ট্র্যাটেজির জন্য আমাদের সাথে থাকুন।
