Fake News Essay: নৈতিক সাংবাদিকতা ও ভুয়া খবর রচনা (800 Words)

নৈতিক সাংবাদিকতা তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে, কিন্তু ভুয়া খবরের বিস্তার সমাজে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস তৈরি করছে। সচেতনতা, যাচাই-বাছাই ও দায়িত্বশীল সংবাদচর্চা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জরুরি। তাই আজকের পোস্টে নৈতিক সাংবাদিকতা ও ভুয়া খবর রচনা শেয়ার করলাম যা আপনি যেকোনো পরীক্ষায় বেবহার করতে পারেন।

নৈতিক সাংবাদিকতা ও ভুয়া খবর রচনা

ভূমিকা

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকতাকে। একটি সুস্থ ও সচেতন সমাজ গঠনে সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতা এক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে, যার নাম ‘ভুয়া খবর‘ বা ‘ফেক নিউজ‘ (Fake News)। একদিকে ইন্টারনেটের বিপ্লব যেমন তথ্যের আদান-প্রদান সহজ করেছে, অন্যদিকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর খবরের দাপট মানুষের বিশ্বাসকে নড়বড়ে করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নৈতিক সাংবাদিকতা বা Ethical Journalism-এর গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’ কী?

সহজ কথায়, যে খবরের কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই, যা সম্পূর্ণ মনগড়া এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, তাকেই ভুয়া খবর বা ফেক নিউজ বলা হয়। হলুদ সাংবাদিকতা, প্রোপাগান্ডা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমের অপব্যবহার করে এই ধরণের খবর ছড়ানো হয়। অনেক সময় পুরনো কোনো ভিডিও বা ছবিকে নতুন ঘটনার সাথে জুড়ে দিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়, যা সাধারণ মানুষকে সহজেই উত্তেজিত বা বিভ্রান্ত করতে পারে।

বর্তমান সমাজে ভুয়া খবরের বিস্তার ও কারণ

আজকের দিনে ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে স্মার্টফোন এবং সস্তা ইন্টারনেটের সুবাদে খবর চোখের পলকে ছড়িয়ে পড়ে। ভুয়া খবর এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কিছু প্রধান কারণ রয়েছে:

  • সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, বা এক্স (টুইটার)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই মানুষ খবর শেয়ার করে।
  • ক্লিকবেইট সংস্কৃতি: অনেক অনলাইন পোর্টাল বেশি ভিউ এবং আয়ের আশায় চটকদার ও মিথ্যা শিরোনাম ব্যবহার করে।
  • রাজনৈতিক স্বার্থ: প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বা জনমত নিজেদের দিকে টানতে অনেক সময় পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়।
  • সচেতনতার অভাব: সাধারণ পাঠকের মধ্যে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ বা সত্যতা যাচাইয়ের মানসিকতা না থাকায় তারা যা দেখে তাই বিশ্বাস করে।

সমাজে ও রাষ্ট্রে ভুয়া খবরের নেতিবাচক প্রভাব

ভুয়া খবরের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

  • দাঙ্গা ও সহিংসতা: ভারতে বহুবার দেখা গেছে যে, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো গুজবের কারণে গণপিটুনি বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধেছে।
  • গণতন্ত্রের ক্ষতি: নির্বাচনের সময় ভুল তথ্য ভোটারদের প্রভাবিত করে, যা একটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
  • মানসিক অস্থিরতা: করোনাকালে আমরা দেখেছি কীভাবে ভুল চিকিৎসা বা মিথ্যা তথ্যের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।
  • অবিশ্বাস: ক্রমাগত মিথ্যা খবরের ভিড়ে মানুষ আসল সাংবাদিকতা বা সত্য খবরের ওপর থেকেও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে।

নৈতিক সাংবাদিকতা: সময়ের দাবি

এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নৈতিক সাংবাদিকতাই একমাত্র আশার আলো। নৈতিক সাংবাদিকতা বলতে বোঝায় সত্য, নির্ভুলতা, এবং নিরপেক্ষতার সাথে সংবাদ পরিবেশন করা। একজন নৈতিক সাংবাদিকের মূল দায়িত্ব হলো—জনগণের সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরা, কোনো পক্ষাবলম্বন না করা এবং খবরের উৎস যাচাই করা

নৈতিক সাংবাদিকতার মূল স্তম্ভগুলি হলো:

  • সত্যনিষ্ঠা: যেকোনো মূল্যে সত্য প্রকাশ করা।
  • নিরপেক্ষতা: খবর পরিবেশনে কোনো ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক মতামতের প্রভাব না ফেলা।
  • দায়বদ্ধতা: সমাজের প্রতি এবং পাঠকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। ভুল খবর প্রকাশিত হলে তা স্বীকার করে সংশোধন করা।

প্রতিকারের উপায় ও ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

ভুয়া খবরের এই মহামারী রুখতে শুধুমাত্র আইন বা সাংবাদিকরাই যথেষ্ট নন, সাধারণ মানুষ এবং ছাত্রছাত্রীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

  • উৎস যাচাই (Source Verification): কোনো খবর শেয়ার করার আগে দেখতে হবে খবরটি কোনো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে কি না।
  • ফরোয়ার্ড করার আগে ভাবা: হোয়াটসঅ্যাপে কোনো মেসেজ এলেই তা যাচাই না করে অন্যকে পাঠানো বন্ধ করতে হবে।
  • টেকনোলজির ব্যবহার: গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ বা বিভিন্ন ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে ছবির সত্যতা যাচাই করা শেখা উচিত।
  • মিডিয়া লিটারেসি: স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে সংবাদ সাক্ষরতা বা Media Literacy অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা ছোট থেকেই সত্য ও মিথ্যার তফাত বুঝতে পারে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ভুয়া খবরের চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। কিন্তু সত্যের শক্তি মিথ্যার চেয়ে অনেক বেশি। নৈতিক সাংবাদিকতা যদি তার আদর্শ ধরে রাখতে পারে এবং আমরা নাগরিক হিসেবে যদি আরেকটু সচেতন হই, তবে এই অপশক্তির মোকাবিলা করা সম্ভব।

ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে ছাত্রছাত্রীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের দায়িত্ব হবে গুজবে কান না দিয়ে যুক্তিবাদী মন নিয়ে সত্যের অনুসন্ধান করা। মনে রাখতে হবে, একটি সঠিক তথ্য যেমন জীবন বাঁচাতে পারে, তেমনি একটি ভুল তথ্য সমাজকে ধ্বংস করতে পারে।

আরও পড়ুন

  • বৃক্ষচ্ছেদন ও তার প্রতিকার Read →
  • নবজাগরণের পথে বাংলার লোক সংস্কৃতি Read →
  • রক্তদান জীবনদান প্রবন্ধ Read →
  • ফেসবুক : সোশ্যাল মিডিয়া রচনা Read →
  • করোনাকালে অনলাইন শিক্ষা Read →
  • YouTube-এর গুরুত্ব, সুফল, কুফল Read →
  • ডেঙ্গি একটি ভয়াবহ রোগ Read →
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ Read →
  • বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? বিজ্ঞানের অশুভ দিক এবং শুভঃ দিক গুলি Read →
  • বিজ্ঞান ও কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় কবি বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র : পথের পাঁচালী বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • একজন আদর্শ স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা Read →
  • মোবাইল ফোন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন বাংলা প্রবন্ধ রচনা Read →
  • বিজ্ঞানী আবদুল কালাম বাংলা রচনা Read →
  • করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা Read →
  • সাহিত্যপাঠের মূল্য বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →
  • বইপড়া বাংলা রচনা Read →

Leave a Comment

error: Content is protected !!